Showing posts with label গল্প. Show all posts
Showing posts with label গল্প. Show all posts

Sunday, December 18, 2016

ছোট লোক'এ রা'

আপনার অফিসে যে লোকটি ঝাড়ু দেন, যাকে দেখলেই আপনার মনে হতে থাকে, এমনিতেই একটা বকা দিয়ে দিলেও কী-ই বা হবে, নিজের বাসার কোনো রাগ কিংবা ব্যক্তিগত ক্ষোভ ঝাড়ার সবচাইতে নিরাপদ স্থানটি ভেবে যাকে মুখে যা-ই আসে, তা-ই বলে ফেলা যায় ভাবেন, কখনো কখনো গায়ে হাত তুলতে ইচ্ছে করলে যার গায়ে হাত তোলাটা নিজের অধিকারের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যার বাবা-মা তুলে গালাগালি করে নিজের অসুস্থ মানসিকতাটা সামনে নিয়ে এলেও কিচ্ছু হয় না, যিনি আপনার সব অন্যায় কথাগুলি শোনাকে উনার চাকরির একটা অংশ মনে করেন, যাকে তুইতোকারি করা যায় বিনা অস্বস্তিতেই, নিজের জুতোজোড়াও সরিয়ে রাখতে যাকে হাঁক দিয়ে বলেন জোরেই, যার অসহায়ত্ব দেখলে আপনার কদর্য পৌরুষ সুড়সুড়ি পেয়ে নাচতে থাকে, উনিও কিন্তু একটা পরিবারের সর্বময় কর্তা। আপনি স্রেফ একটা তুড়িতেই উনার চাকরিটা ‘খেয়ে ফেলতে’ পারেন বলে উনি আপনার সামনে নত হয়ে সব অবিচারগুলিকেও সহ্য করে। কণ্ঠস্বরটাও যথাসম্ভব নামিয়ে কথা বলেন, কারণ স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরকে বেয়াদবি ভেবে বসে আপনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন। সে ভয়ে উনি হাসিমুখে বিনা বাক্যব্যয়ে যা-ই বলেন না কেন, মেনে নেন, এমনভাবেই, যেন মন থেকেই নিয়েছেন! এটা শ্রদ্ধা নয়, ভালোবাসা নয়, এটা স্রেফ ভয়। চুপ করে থাকা মানেই কিন্তু মন থেকে গ্রহণ করা নয়। প্রতিবাদের অনুপস্থিতি মানেই ন্যায্যতা নয়। শরীরের শক্তির নির্লজ্জ প্রকাশে মনের নাজুকতাই ফুটে ওঠে। এই পৃথিবীতে সবচাইতে দুর্বল চিত্তের মানুষগুলোকেই অন্যের গায়ে হাত তুলতে হয়। মানুষ যখন তার নিজের অবস্থানের অযোগ্য হয়, তখনই নিজের অবস্থানের সুযোগ গ্রহণ করে অন্যকে আঘাত করে। বড় অবস্থানের ছোটলোকমাত্রই ভয়ংকর!

আপনার অফিসের সেই ঝাড়ুদারের কথায় ফিরে যাই। সেই উনি যখন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন একটা সস্তা লজেন্স হাতে নিয়ে, উনার পুতুলের মতন আদুরে ছোট্ট মেয়েটি তখন খুশিতে উনার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর উনার চুলগুলি সরিয়ে দেয়, কপালে, চোখে, গালে চুমু খায়, আর লজেন্সটা চুষতে চুষতে বলতে থাকে, “আব্বু, তুমি অনেক ভাল!” বাবার সেই মুহূর্তে মনে হতে থাকে, এর চাইতে দামি সার্টিফিকেট পৃথিবীর সেরা ভার্সিটিতেও মেলে না। সারাদিনে কী কী হল, ওকে কে কী কী বলেছে, বন্ধুদের সাথে কী কী খেলল, আম্মু কখন কখন বকা দিয়েছে, একে একে সব বলতে থাকে। উনার স্ত্রী তখন একটু দূর থেকে বাপবেটির এসব খুনসুটি দেখতে থাকেন আর মুচকি হেসে ভাবেন, “এর চাইতে সুন্দর দৃশ্য কে কবে কোথায় দেখেছে?” সবচাইতে দরিদ্র অবহেলিত মানুষটিও কোনো এক নারীর চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ, কোনো একটি শিশুর বিশ্বাসে পৃথিবীর সেরা পিতা। সেই পুরুষটি এরপর স্ত্রীর খোঁপায় হয়তো পরিয়ে দেন দিনের শেষে সস্তায় বিক্রি-হওয়া একটা ফিকে হয়েওঠা গোলাপ। স্ত্রীর মুগ্ধতার কাছে ওটাই পৃথিবীর সবচাইতে দামি উপহার!